চায়না থেকে পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করা এখন অনেক উদ্যোক্তার কাছে লাভজনক একটি সুযোগ। তবে ব্যবসায় সফল হতে হলে শুধু পণ্য আনা নয়, সঠিকভাবে দাম নির্ধারণ (Pricing Strategy) করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভুল দামে বিক্রি করলে হয়তো পণ্য বিক্রি হবে, কিন্তু লাভ কমে যাবে কিংবা লোকসান হবে। আবার দাম বেশি হলে ক্রেতা হারানোর ঝুঁকিও থাকে।
এখানে আমরা দাম নির্ধারণ করার সময় কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে তা বিস্তারিত আলোচনা করবো।
১. পণ্যের মোট খরচ (Total Landed Cost) সঠিকভাবে হিসাব করুন
পণ্যের দাম নির্ধারণের আগে প্রথমেই জানতে হবে একটি পণ্যের প্রকৃত খরচ কত দাঁড়াচ্ছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে:
- চায়না থেকে কেনার দাম
- শিপমেন্ট খরচ (Air/Sea Freight)
- কাস্টমস ফি এবং শুল্ক
- বাংলাদেশে লোকাল ট্রান্সপোর্ট ও হ্যান্ডলিং চার্জ
👉 অনেক উদ্যোক্তা শুধু চায়না থেকে কেনার দাম মাথায় রেখে দাম নির্ধারণ করেন। কিন্তু সম্পূর্ণ খরচ যোগ না করলে প্রকৃত লাভ বোঝা যায় না।
২. বাজারে প্রতিযোগিতা (Competition) যাচাই করুন
দাম নির্ধারণের সময় আপনার প্রতিযোগীরা একই ধরনের পণ্য কত দামে বিক্রি করছে তা খুঁজে বের করুন।
- যদি আপনার দাম অনেক বেশি হয়, তাহলে ক্রেতারা প্রতিযোগীর কাছে চলে যাবে।
- আবার যদি দাম অনেক কম রাখেন, তাহলে হয়তো বিক্রি হবে বেশি, কিন্তু লাভ টিকবে না।
সঠিক কৌশল হলো বাজার দামের সাথে মিল রেখে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (যেমন দ্রুত ডেলিভারি, ভালো মান, গ্যারান্টি) দিয়ে দামকে আকর্ষণীয় করা।
৩. লক্ষ্য কাস্টমার নির্ধারণ করুন
সব ধরনের কাস্টমার একই দামে পণ্য কিনতে রাজি হবে না।
- পাইকারি ক্রেতা কম দামে কিনতে চায়, তবে একসাথে বেশি পরিমাণ নেয়।
- খুচরা ক্রেতা প্রতি পণ্যে বেশি দামে কিনতে রাজি, তবে অল্প কিনে।
তাই আপনার টার্গেট গ্রাহক কোন শ্রেণির, তার উপর দাম নির্ধারণ ভিন্ন হতে পারে।
৪. লাভের হার (Profit Margin) নিশ্চিত করুন
প্রতিটি ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য ন্যূনতম লাভ নিশ্চিত করা জরুরি।
- সাধারণত খুচরা বিক্রিতে লাভের হার পাইকারির তুলনায় বেশি রাখা হয়।
- তবে পণ্যের ধরন ও প্রতিযোগিতার ওপর ভিত্তি করে ১০% থেকে ৫০% পর্যন্ত মার্জিন রাখা যেতে পারে।
👉 দাম নির্ধারণের সময় সবসময় খেয়াল রাখবেন যে, অপ্রত্যাশিত খরচ (Customs Delay, Extra Freight ইত্যাদি) যোগ হলেও যেন আপনি লোকসানে না পড়েন।
৫. ব্র্যান্ডিং এবং ভ্যালু
যদি আপনার পণ্যে আলাদা মান, প্যাকেজিং বা ব্র্যান্ড ভ্যালু থাকে, তবে আপনি বাজারের থেকে সামান্য বেশি দামও রাখতে পারেন। অনেক গ্রাহক মানের নিশ্চয়তার জন্য একটু বেশি দাম দিতে রাজি থাকে।
৬. দীর্ঘমেয়াদি কৌশল (Long-term Strategy)
শুধু দ্রুত লাভ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে বাজারে টিকে থাকার জন্য দাম নির্ধারণ করা উচিত।
- নতুন ব্যবসায়ীরা শুরুতে কম দামে কাস্টমার আকর্ষণ করতে পারেন।
- পরে ধীরে ধীরে বাজারে সুনাম হলে দাম বাড়ানো যায়।
চায়না থেকে আমদানিকৃত পণ্যের দাম নির্ধারণ করার সময় শুধু ক্রয়ের খরচ নয়, সম্পূর্ণ ল্যান্ডেড কস্ট, বাজার প্রতিযোগিতা, লক্ষ্য গ্রাহক, লাভের হার এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু—সব কিছু বিবেচনায় রাখতে হবে। সঠিক প্রাইসিংই আপনার ব্যবসাকে টেকসই এবং লাভজনক করে তুলবে।
Leave A Comment