চায়না থেকে পণ্য আমদানি করে ব্যবসা করা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে। কিন্তু নতুন কিংবা অভিজ্ঞ আমদানিকারকরা প্রায়শই কিছু সাধারণ ভুল করে থাকেন, যা তাদের ব্যবসায় ক্ষতি বয়ে আনে। এ ধরনের ভুলগুলো এড়িয়ে চলা গেলে আমদানি প্রক্রিয়া অনেক বেশি মসৃণ এবং সফল হবে। আসুন জেনে নেই চায়না থেকে পণ্য আমদানির সময় সবচেয়ে বেশি করা কিছু ভুল এবং সেগুলো এড়ানোর উপায়।

১. সরবরাহকারী যাচাই না করা

নতুন আমদানিকারকরা অনেক সময় সরবরাহকারী যাচাই না করেই অর্ডার দিয়ে দেন, যা পরে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। চায়নার বাজারে হাজার হাজার সরবরাহকারী আছে, কিন্তু সবাই সৎ বা মানসম্মত নয়। নিম্নমানের সরবরাহকারী থেকে পণ্য নিলে ব্যবসার সুনাম নষ্ট হতে পারে।

যা করবেন:

  • সরবরাহকারীর প্রোফাইল, রেটিং এবং রিভিউ যাচাই করুন।
  • আলিবাবা বা গ্লোবাল সোর্সেসের মতো নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন।
  • সরাসরি যোগাযোগ করে তাদের প্রোডাক্টের নমুনা চেয়ে নিন।

২. শুধুমাত্র সস্তা পণ্য নির্বাচন করা

অনেক ব্যবসায়ী কম খরচে বেশি লাভের আশায় সস্তা পণ্য নির্বাচন করেন, কিন্তু এতে পণ্যের গুণগত মান খারাপ হতে পারে। কম দামের পণ্যগুলি প্রায়শই নিম্নমানের হয়ে থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে ব্যর্থ হয়।

যা করবেন:

  • দামের পাশাপাশি গুণগত মান এবং সরবরাহকারীর রেপুটেশন বিবেচনা করুন।
  • সস্তা পণ্যের দিকে না ঝুঁকে মানসম্মত পণ্য নির্বাচন করুন, যা আপনাকে ক্রেতাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা এনে দেবে।

৩. কাস্টমস ফি এবং অন্যান্য খরচের ভুল হিসাব করা

অনেক নতুন আমদানিকারক শুধু পণ্য এবং শিপিং খরচের হিসাব করেন, কিন্তু কাস্টমস ফি, ট্যাক্স, এবং অন্যান্য খরচ ভুলে যান। এর ফলে পণ্য পৌঁছানোর পর অতিরিক্ত খরচের সম্মুখীন হতে হয়।

যা করবেন:

  • কাস্টমস ফি, শুল্ক, ভ্যাট, এবং অন্যান্য করের খরচ আগে থেকেই সঠিকভাবে হিসাব করুন।
  • প্রয়োজনে কাস্টমস ব্রোকারের সাহায্য নিন, যারা আপনাকে সঠিক তথ্য এবং পরামর্শ দিতে পারবে।

৪. ভুল শিপিং পদ্ধতি নির্বাচন করা

শিপিং পদ্ধতি নির্বাচনের সময় ভুল করলে অতিরিক্ত খরচ বা সময়ের অপচয় হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, দ্রুত পণ্য পাওয়ার জন্য এয়ার ফ্রেইট বেছে নিয়ে বেশি খরচ করে ফেলতে পারেন, যখন একই পণ্য সি ফ্রেইট দিয়ে কম খরচে আনা সম্ভব হতো।

যা করবেন:

  • পণ্যের ধরন, ওজন, এবং ডেলিভারি সময় অনুযায়ী সঠিক শিপিং পদ্ধতি নির্বাচন করুন।
  • এয়ার ফ্রেইট দ্রুত কিন্তু ব্যয়বহুল, যেখানে সি ফ্রেইট ধীর কিন্তু সাশ্রয়ী।

৫. পেমেন্ট শর্তাবলী সঠিকভাবে আলোচনা না করা

পেমেন্ট শর্তাবলী নিয়ে ভালোভাবে আলোচনা না করলে আপনি আর্থিক সমস্যায় পড়তে পারেন। অনেক আমদানিকারক সরবরাহকারীর সাথে আলোচনা না করেই ১০০% পেমেন্ট অগ্রিম দিয়ে দেন, যা একটি ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ।

যা করবেন:

  • এলসি (লেটার অফ ক্রেডিট) ব্যবহার করার চেষ্টা করুন, যা নিরাপদ।
  • সরবরাহকারীর সাথে আলোচনা করে পেমেন্টের কিস্তি ঠিক করে নিন, যেমন ৩০% অগ্রিম এবং বাকি ৭০% পণ্য শিপিংয়ের পর।

৬. কাস্টমস ডকুমেন্টেশনে ভুল করা

অনেক সময় কাস্টমসের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ঠিকমতো প্রস্তুত না থাকার কারণে পণ্য আটকে যায় বা অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হয়।

যা করবেন:

  • বিল অব লেডিং, ইনভয়েস, প্যাকিং লিস্ট এবং অন্যান্য কাস্টমস ডকুমেন্ট সঠিকভাবে প্রস্তুত করুন।
  • কাস্টমস ব্রোকারের সহায়তা নিন, যারা আপনার হয়ে এসব প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে।

৭. নমুনা ছাড়া অর্ডার দেওয়া

অনেক আমদানিকারক সরাসরি বড় পরিমাণে অর্ডার দিয়ে দেন, যা পরবর্তীতে মানসম্মত না হলে সমস্যা তৈরি করে।

যা করবেন:

  • সরবরাহকারীর কাছ থেকে আগে নমুনা নিয়ে তার গুণগত মান পরীক্ষা করুন।
  • নমুনা সন্তোষজনক হলে তবেই বড় পরিমাণে অর্ডার দিন।

উপসংহার

চায়না থেকে পণ্য আমদানির সময় কিছু সাধারণ ভুল করে ফেলা স্বাভাবিক। তবে, সঠিকভাবে পরিকল্পনা করলে এবং উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে আপনি এই ধরনের ভুল এড়িয়ে চলতে পারবেন। এতে আপনার ব্যবসা আরও সফল এবং লাভজনক হবে। সঠিক সরবরাহকারী নির্বাচন, মানসম্মত পণ্য চয়ন, এবং শিপিং পদ্ধতি বুঝে ব্যবসা পরিচালনা করুন, আর ঝুঁকি কমিয়ে সফল আমদানিকারক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুন।

Leave A Comment